মেয়েদের হরমোন বেশি হলে কি বাচ্চা হয় না জেনে নিন
মেয়েদের হরমোন বেশি হলে কি বাচ্চা হয় না এই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? মেয়েদের
হরমোন বেশি হলে কি হয় আর মেয়েদের হরমোন কম হলে কি হয় এই ধরণের চিন্তা যেসব
বিবাহিত মেয়েরা বেশি করে থাকেন।
আসলে বিয়ের পর বাচ্চা নিতে গেলে যখন বাচ্চা
গর্ভে আসেনা ঠিক তখনই এইধরনের কথা মাথায় আসে। তাহলে হরমোন কম বা বেশি হলে কি
আসলেই বাচ্চা হয় না এই সম্পর্কে বিস্তারিত আজকে জানতে পারবেন। তবে চলুন জেনে
নেওয়া যাক হরমোন বেশি হলে কি বাচ্চা হয় না এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
সূচিপত্রঃ হরমোন বেশি হলে কি বাচ্চা হয় না
- হরমোন বেশি হলে কি বাচ্চা হয় না
- মেয়েদের হরমোন বেশি হলে কি হয়
- মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না
- মায়ের থাইরয়েড থাকলে কি বাচ্চা হয়
- হরমোন বেশি হলে কি সমস্যা হয়
- পুরুষের থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না
- হরমোনের সমস্যা হলে কি হয়
- মেয়েদের হরমোন কম হলে কি হয়
- শেষ কথাঃ হরমোন বেশি হলে কি বাচ্চা হয় না
হরমোন বেশি হলে কি বাচ্চা হয় না
আসলেই কি মেয়েদের হরমোন বেশি হলে বাচ্চা হয় না এইটা জানা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানব দেহের জন্য হরমোন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন
করে থাকে। আমাদের শরীরে হরমোনের প্রভাব প্রজনন এবং গর্ভধারণের জন্য বিশেষ
ভুমিকা পালন করে থাকে। শরীরে হরমোনের মাত্রা যদি সামান্য পরিমাণেও বেড়ে
যায়, তাহলে সেটা মেয়েদের গর্ভধারণে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। নিচে
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দেওয়া হলোই
- প্রলাক্টিন হরমোনের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে এটা মেয়েদের মাসিক প্রক্রিয়াকে অনিয়মিত করে। গর্ভধারণের নানারকম সমস্যার সৃষ্টি করে। এছাড়াও ডিম্বস্ফোটন বা ওভিউলেশন (Ovulation) প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
- টেস্টোস্টেরন হরমোন মেয়েদের শরীরে বেশি থাকলে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) হতে পারে। অর্থাৎ এই অবস্থায় নারীর শরীরে পুরুষের হরমোন বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পায়, যেটা নারীদের গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করে।
- থাইরয়েডের সমস্যার কারণে অনিয়মিত মাসিক বা ঋতুস্রাব কিংবা বন্ধ্যাত্ব জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজন শরীরের হরমোনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে এবং গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করে।
- হাইপোথাইরয়েডিজম ডিম্বাণুর গুণগত মান কমিয়ে দেয় এবং গর্ভপাতের রিস্ক অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
প্রতিরোধঃ
- ওজন নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম, স্ট্রেস কমানো (কর্টিসল হরমোনের imbalance কমায়)।
- বাদাম, সবুজ শাকসবজি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে।
- নিয়মিত TSH, প্রোল্যাক্টিন, FSH/LH টেস্ট করানো।
হরমোনের মাত্রা বেশি হলে নানারকম সমস্যা দেখা দিতে
পারে। কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। সঠিক ডায়াগনোসিস
ও চিকিৎসা করলে ৮০ভাগ ক্ষেত্রেই সফল গর্ভধারণ সম্ভব হয়।
মেয়েদের হরমোন বেশি হলে কি হয়
মেয়েদের হরমোন বেশি হলে কি হয় অনেকেই জানে না। মেয়েদের শরীরে
হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে সেটা শারীরিক ও মানসিক নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি
করে। যেমন, এস্ট্রোজেন বা টেস্টোস্টেরন বেশি হলে পলিসিস্টিক ওভারি
সিনড্রোম (PCOS) হতে পারে, যার ফলে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ওজন বৃদ্ধি, মুখে
অবাঞ্ছিত লোম ও ব্রণ দেখা দেয়।
প্রোল্যাক্টিন হরমোন বেশি থাকলে স্তন থেকে দুধ নিঃসরণ হয়।
এছাড়াও ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া বা গর্ভধারণে সমস্যা হয়। থাইরয়েড
হরমোন বেশি হলে ওজন ওঠানামা, ক্লান্তি বা অবসাদ দেখা দিতে
পারে। এছাড়াও, হরমোনের ভারসাম্য ত্বকের সমস্যা, মুড সুইং এবং চুল
পড়া অনেক গুন বেড়ে যায়।
মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না
মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না এটা অনেকের ভুল ধারণা। থাইরয়েড
হরমোন মেয়েদের প্রজনন ও গর্ভধারণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। থাইরয়েড
হরমোনের সমস্যা থাকলে অনিয়মিত পিরিয়ড বা মাসিক হয়, ডিম্বস্ফোটন ঘটে না
এবং গর্ভপাত জনিত নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়।
তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে এইধরনের সমস্যা গুলো থেকে মুক্তি লাভ করা
যায়। গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হরমোন পেটে বাচ্চার ভ্রূণের মস্তিষ্ক ও
শারীরিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই সঠিক সময়ে ডাক্তারের
চিকিৎসা নিলে থাইরয়েড রোগীরাও সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে পারে।
মায়ের থাইরয়েড থাকলে কি বাচ্চা হয়
মায়ের থাইরয়েড থাকলে কি বাচ্চা হয় এটা অনেকেই জানতে চান। আসলে মায়ের
থাইরয়েড থাকলে গর্ভধারণ ও বাচ্চার বিকাশে প্রভাব পড়তে পারে। যদি সঠিক
মুহূর্তে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিলে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ এবং সুস্থ
বাচ্চা জন্ম দেয়া সম্ভব হয়।
হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোন কম) থাকলে গর্ভপাত, প্রি-এক্লাম্পসিয়া
বা অপরিণত জন্মের ঝুঁকি বাড়ে। হাইপারথাইরয়েডিজম (হরমোন বেশি) থাকলে
হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, ওজন কম বা গর্ভের শিশুর থাইরয়েড সমস্যা হতে
পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের থাইরয়েড হরমোন অপর্যাপ্ত হলে শিশুর
মস্তিষ্ক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে।
সমাধান: গর্ভধারণের আগেই থাইরয়েড পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়া
জরুরি। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত হরমোন মাত্রা পরীক্ষা
করা। ডাক্তারের পরামর্শে আয়োডিনযুক্ত খাবার খাওয়া এবং সচেতনতা
ও সময়মতো চিকিৎসা নিলে থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত মায়েরাও সুস্থ সন্তান
জন্ম দিতে পারেন।
হরমোন বেশি হলে কি সমস্যা হয়
থাইরয়েড হরমোন বেশি হলে শরীরে নানা ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন:
শারীরিক লক্ষণ, মানসিক প্রভাব, গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি এবং দীর্ঘমেয়াদি নানা
রকম সমস্যা দেখা দেয়। শারীরিক সমস্যার গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ওজন কমে
যাওয়া, ঘাম বেশি হওয়া, গরম সহ্য না হওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া,
কাঁপুনি এবং চুল পাতলা হয়ে যায়।
এছাড়াও উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা এবং মনোযোগ কমে যায়। শিশুর গর্ভপাত, অপরিণত
জন্ম ইত্যাদি নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া,
হৃদরোগ এর মতো জটিল রোগ বাসা বাঁধে। তবে জেনে রাখা ভালো নিয়মিত হরমোন
পরীক্ষা ও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরি।
পুরুষের থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না
পুরুষের থাইরয়েড সমস্যা যদি থাকে বিশেষ করে হাইপোথাইরয়েডিজম বা
হাইপারথাইরয়েডিজম তাহলে এটা প্রজনন স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। থাইরয়েড
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা শুক্রাণুর গুণমান বা শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দেয় যার
ফলে গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করে।
এছাড়া, থাইরয়েডের সমস্যা পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন এর মাত্রা কমিয়ে দেয়
এর ফলে যৌন ক্ষমতা বা উত্তেজনা কমে যায়। তাই, থাইরয়েড সমস্যা থাকলে
চিকিৎসা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে প্রজনন স্বাস্থ্য ভালো হবে এবং
পুরুষের পিতা হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
হরমোনের সমস্যা হলে কি হয়
শরীরে হরমোনের সমস্যা হলে কি হয় এটা অনেকেই জানেন না। আসলে আমাদের শরীরে
হরমোন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। হরমোনের সমস্যা হলে সেটা শরীরের উপর
বিশেষ ভাবে প্রভাব ফেলে এবং শারীরিক নানা ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হয়।
শরীরে যদি হরমোনের মাত্রা কম বা বেশি হয় তখন নানা রকম শারীরিক ও মানসিক
সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন: ক্লান্তি বোধ , ওজন বেড়ে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে
হয়ে যাওয়া, প্রজনন বা গর্ভধারণ সমস্যা এবং ত্বক ও চুলের সমস্যা দেখা
দেয়।
থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে এবং ক্লান্তির সৃষ্টি করে।
এছাড়াও অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু তৈরিতে বাধা সৃষ্টি
করে।
মেয়েদের হরমোন কম হলে কি হয়
মেয়েদের হরমোন কম হলে নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। নিচে সমস্যা
গুলো তুলে ধরা হলো।
মেয়েদের হরমোন কম হলে পিরিয়ড বা মাসিক অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। এর ফলে
মেয়েদের গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দেয়।
- হরমোন বেশি বা কম হলে মেয়েদের হঠাৎ করেই ওজন বেড়ে যেতে পারে কিংবা কমে যেতে পারে।
- হরমোনের অভাব মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষন্নতার কারণ হতে পারে।
- ত্বক শুষ্ক, ব্রণ এবং চুল পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
- শরীরে সবসময় ক্লান্তি অনুভব করা।
- যৌন বা শারীরিক মিলন করার ইচ্ছা কমে যায়।
শেষ কথাঃ হরমোন বেশি হলে কি বাচ্চা হয় না
হরমোনের মাত্রা বেশি হলে গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে, প্রলাক্টিন এবং
পুরুষ হরমোনের উচ্চ মাত্রা ডিম্বস্ফোটন (ovulation) প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত
করে, যা গর্ভধারণের জন্য অপরিহার্য। এছাড়া, পিসিওএস (Polycystic Ovary
Syndrome) এর মতো অবস্থায় হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, যা গর্ভধারণে বাধা
সৃষ্টি করে।তাই হরমোনের সমস্যা থাকলে চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এতে
প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে এবং পিতা-মাতা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url