থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না - হরমোন কম হলে কি বাচ্চা হয় না?

থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না জানতে চান? থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা ছেলে এবং মেয়ে দুই জনের ক্ষেত্রেই দেখা দিতে পারে। থাইরয়েড সমস্যা একটি কমন রোগ যেটা কম বেশি সকলের মধ্যেই দেখা দেয়। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এই থাইরয়েড সমস্যাটি দেখা যায়।
থাইরয়েড-হলে-কি-বাচ্চা-হয়-না
অনেক নারীরা মনে করেন যে থাইরয়েড হরমোন কম বা বেশি হলে বুঝি তাদের বাচ্চা হবে না। আজকের এই আলোচনায় জানতে পারবেন যে মেয়দের থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না এই সম্পর্কে বিস্তারিত। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক পুরুষের অথবা মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

সূচিপত্রঃ থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না

থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না

থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না এটা অনেকেই জানতে চান। আসলে থাইরয়েড হরমোন বেশি হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে। থাইরয়েড প্রভাবে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, অতিরিক্ত নানা ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হয়।

তবে চিকিৎসা নিলে স্বাভাবিক গর্ভধারণ ও সুস্থ বাচ্চা জন্মদান সম্ভব। নিচে বিশেষ ভাবে থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না এই সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।
  • থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে নারীদের ঋতুচক্র বা প্রজনন ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
  • থাইরয়েড সমস্যার কারণে গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দেয়। যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভপাত এবং নবজাতক বাচ্চারও থাইরয়েড সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অনিয়মিত মাসিক এবং ডিম্বস্ফুটনে ব্যাঘাত ঘটায়।
  • প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে গর্ভধারণে সমস্যা তৈরী করে।
  • গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • অনিয়ন্ত্রিত হাইপোথাইরয়েডিজম গর্ভপাত, প্রি-ম্যাচিওর ডেলিভারি বা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সমস্যা তৈরি করে।
থাইরয়েড সমস্যা গর্ভধারণে সমস্যা তৈরি করতে পারে। কিন্তু সঠিক চিকিৎসায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাচ্চা হওয়া সম্ভব। অনিয়ন্ত্রিত থাইরয়েড ঝুঁকিপূর্ণ, তাই নিয়মিত চেকআপ ও ওষুধ গ্রহণ করা জরুরি।

মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না

মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না এইটার সঠিক উত্তর হচ্ছে তিনি গর্ভধারণ করতে পারবেন। তবে অবশ্যই আপনাকে একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে এবং নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে থাইরয়েড হরমোন বাচ্চা গর্ভধারণে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি করে। যেমন:
থাইরয়েড-হলে-কি-বাচ্চা-হয়-না
  • মেয়েদের ডিম্ম্বসফুটন অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ করে দেয়।
  • মেয়েদের মাসিক বা ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে যায়।
  • প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয় যার কারণে গর্ভধারণ সম্ভব হয় না।
  • ঋতুস্রাব হালকা কিংবা ঘনঘন হয়ে থাকে।
  • গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • লেভোথাইরোক্সিন (Thyroxine) ওষুধে TSH মাত্রা স্বাভাবিক হলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে।
  • Methimazole বা PTU দিয়ে থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • কিছু ক্ষেত্রে সার্জারি বা রেডিওআয়োডিন থেরাপি প্রয়োজন হয়।
  • মায়ের হার্ট ফেইলিউর হতে পারে এবং গর্ভের শিশুর ওজন কম হতে পারে।

পুরুষের থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না

পুরুষের থাইরয়েড হলে বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে তবে এটি সম্পূর্ণ ভাবে বাঁধা সৃষ্টি করে না। থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বিশেষ করে হাইপারথাইরয়েডিজম বা হাইপোথাইরয়েডিজম শুক্রাণুর তৈরি হওয়াকে কমিয়ে দেয় যার ফলে পুরুষের সন্তান ধারণে সমস্যা হয়।

এছাড়াও পুরুষের থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে যৌন ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায় এর কারণেও বাচ্চা হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়। তাই, থাইরয়েড সমস্যা থাকলে হতাশ না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করা উচিত এবং নিয়ম মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মেয়েদের হরমোন বেশি হলে কি বাচ্চা হয় না

মেয়েদের হরমোন কম হলে যেমন বাচ্চা হওয়া বা গর্ভধারণে সমস্যা হয় তেমনি মেয়েদের হরমোন বেশি হলেও গর্ভধারণে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। মেয়েদের শরীরে বিশেষ করে কিছু নির্দিষ্ট হরমোনে, যেমনঃ অ্যান্ড্রোজেন আধিক্য থাকলে গর্ভধারণে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

এর কারণে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ডিম্বস্ফোটনে সমস্যা এবং পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) এর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা গর্ভধারণে সমস্যা তৈরি করে। তবে হরমোনের সমস্যা থাকলেই যে বাচ্চা হবে না এটা সঠিক নয়।

সঠিক ভাবে চিকিৎসার মাধ্যমে মেয়েদের হরমোন সমস্যা নিয়ন্ত্রন করা যায় এবং বাচ্চা হওয়ার সম্ভবনা সৃষ্টি হয়। তাই, মেয়েদের হরমোন বেশি হলে হতাশ না হয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।

হরমোন কম হলে কি বাচ্চা হয় না

হরমোন কম হলে বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। হরমোনের মাত্রা কমে গেলে (হাইপোথাইরয়েডিজম) গর্ভধারণে সমস্যা হয়ে থাকে। থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি (হাইপোথাইরয়েডিজম) মহিলাদের ডিম্বস্ফোটনে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং গর্ভধারণে বাধা দেয়।পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) গর্ভধারণে সমস্যা সৃষ্টি করে।
থাইরয়েড-হলে-কি-বাচ্চা-হয়-না
সঠিক চিকিৎসা এবং হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গর্ভধারণ সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। সুতরাং, হরমোন কম হলে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে কিন্তু সঠিক চিকিৎসা এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড কত থাকা উচিত

গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড কত থাকা উচিত এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড কত থাকা উচিত জেনে নিন।
পরিক্ষার নাম প্রথম (১-১২ সপ্তাহ) দ্বিতীয় (১৩-২৭ সপ্তাহ) তৃতীয় (২৮-৪০ সপ্তাহ)
TSH (mIU/L) 0.1–2.5 mIU/L 0.2–3.0 mIU/L 0.3–3.0 mIU/L
FT4 (pmol/L) 12–22 pmol/L 9.5–19 pmol/L 8.5–17 pmol/L
থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে গর্ভাবস্থায় কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে, তাই নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। গর্ভাবস্থার আগে এবং পরে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শেষ কথাঃ থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না

পরিশেষে বলা যায় যে, থাইরয়েড সমস্যা থাকলে সন্তান ধারণে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে তবে এটি সম্পূর্ণরূপে বাচ্চা হওয়া বন্ধ করে না। থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম মহিলাদের ঋতুচক্রকে প্রভাবিত করে থাকে এবং ডিম্বস্ফুটনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।

তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে গর্ভধারণ এবং সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেওয়া সম্ভব। গর্ভাবস্থায় থাইরয়েডের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা অপরিহার্য। তাই, থাইরয়েড সমস্যা থাকলে হতাশ না হয়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে মা ও বাচ্চার সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url