ওভুলেশন কখন হয় এবং ওভুলেশন না হলে করনীয় উপায়
ওভুলেশন কখন হয় এবং ওভুলেশন না হলে করনীয় উপায় সম্পর্কে জানতে চান? ওভুলেশন না
হলে একজন নারী কখনোই গর্ভধারণ করতে পারেন না। তাই ওভুলেশন না হলে করনীয় সম্পর্কে
জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও আপনি আজকের এই পোস্টে অনিয়মিত মাসিক হলে ওভুলেশন কখন হয় এবং ওভুলেশনের
কতদিন পর পিরিয়ড হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তবে চলুন জেনে নেওয়া
যাক ওভুলেশন কখন হয় এবং ওভুলেশন না হলে করনীয় পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত
আলোচনা।
আরো পড়ুনঃ
দ্বিতীয় বাচ্চা না হওয়ার কারণ
সূচিপত্রঃ ওভুলেশন কখন হয় এবং ওভুলেশন না হলে করনীয়
- ওভুলেশন কখন হয়
- ওভুলেশন না হলে করনীয়
- অনিয়মিত মাসিক হলে ওভুলেশন কখন হয়
- ওভুলেশনের কতদিন পর পিরিয়ড হয়
- ডিম্বস্ফোটন না হওয়ার কারণ
- শেষ কথাঃ ওভুলেশন না হলে করনীয় - ওভুলেশন কখন হয়
ওভুলেশন কখন হয়
ওভুলেশন কখন হয় এবং ওভুলেশন না হলে করনীয় এইটা জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ
ওভুলেশন সম্পর্কে আমাদের সকলের সঠিক জ্ঞান থাকা উচিত। ওভুলেশন বলতে সসাধারণত
মহিলাদের ডিম্বস্ফোটনকে বুঝায়।
নারীদের এই ওভুলেশন সাধারণত মাসিক বা পিরিয়ডের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে হয়। আর
এই সময়ে নারীদের ডিম্বাশয় থেকে একটি পরিণত ডিম নিঃসরণ হয়।
- মাসিক চক্র ২৮ দিনের মধ্যে নিয়মিত হয়, তাহলে ওভুলেশন ঘটবে ১৪ তম দিন থেকে ১৬ তম দিনের মধ্যে।
- মাসিক চক্র ৩০ দিনের মধ্যে নিয়মিত হয়, তাহলে ওভুলেশন ঘটবে ১৬ তম দিনের কাছাকাছি।
- আবার যদি মাসিক চক্র ২১ দিনের মধ্যে নিয়মিত হয়, তাহলে ওভুলেশন ঘটবে ৭ম দিনে।
- আর যদি মাসিক চক্র ৩৫ দিনের মধ্যে নিয়মিত হয়, তাহলে ওভুলেশন হয় ২১ তম দিনের কাছাকাছি সময়ে।
অনিয়মিত মাসিক চক্রের ক্ষেত্রে ওভুলেশন সময় পরিবর্তনশীল হতে পারে। এছাড়াও
ওভুলেশন শুরু হওয়ার সময় কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। ভুলেশনের পর শরীরের
তাপমাত্রা সামান্য বাড়ে। ডিম্বস্ফোটনের সময় যোনি স্ররণ স্পষ্ট, পিচ্ছিল ও
ডিমের সাদার মতো হয়। হালকা পেটে ব্যথা করে।
আরো পড়ুনঃ
বাচ্চা না হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
এছাড়াও যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়। ওভুলেশন হল গর্ভধারণের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সময়
তাই এই সময়ে যৌন বা শারীরিরিকভাবে মিলন করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ওভুলেশন না হলে করনীয়
ওভুলেশন না হলে করনীয় হিসেবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। ওভুলেশন না হলে
নারীদের গর্ভধারণ করা সম্ভব নয়। যদি ওভুলেশন বা ডিম্বস্ফোটন না হয় তাহলে
গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দেয়। নিচে ওভুলেশন না হলে করনীয় কিছু পদ্ধতি উল্লেখ
করা হলো।
- একজন গাইনোকোলজিস্ট বা ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞের ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করা জরুরি। তারা আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সমস্যা খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন, যেমন ফল, সবজি, এবং প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এর ফলে শরীরের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে।
- মানসিক চাপ কমাতে হবে কারণ এটি আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ের জন্যই উপকারী।
- আপনার বা আপনার সঙ্গীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা খুবই জরুরি। কারণ যদি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে তা নির্ধারণ করে চিকিৎসা করা উচিত।
- চিকিৎসকরা হরমোনাল কিছু ঔষধ সেবন করার জন্য দিতে পারেন যেটা ওভুলেশনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে।
- ওভুলেশন না হলে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে যেমন আইভিএফ বা আইসিএসআই পদ্ধতি বিবেচনা করা গর্ভধারণ করা সম্ভব।
সুতরাং অনিয়মিত পিরিয়ড বা ওভুলেশন না হওয়া মানেই বাচ্চা হবে না এমনটা না।
সঠিক চিকিৎসা নিলে ওভুলেশন ঘটানো সম্ভব। তাই গর্ভধারণের জন্য ওভুলেশন না হলে
করনীয় উপায় গুলো ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে চলুন।
আরো পড়ুনঃ
থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না
অনিয়মিত মাসিক হলে ওভুলেশন কখন হয়
অনিয়মিত মাসিক হলে ওভুলেশন কখন হয় জানতে চান? অনিয়মিত মাসিক হলে ওভুলেশন
এর সময় বের করা কিছুটা জটিল। অনিয়মিত মাসিক হলে ওভুলেশন কখন হয় এই সম্পর্কে
কিছু দিক নির্দেশনা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- সাধারণত, মহিলাদের মাসিক চক্র ২৪ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে পরিবর্তিত হয়। যদি মাসিক চক্রের সময় পরিবর্তিত হয় তাহলে ওভুলেশনও সেই অনুযায়ী পরিবর্তিত হবে।
- ওভুলেশনের সময় শ্লেষ্মার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এটি স্বচ্ছ ও সুতার মতো হয়ে যায় এইটা দেখেও বুঝা যায়।
- ওভুলেশনের পরে শরীরের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পায়। কিছু মহিলার ক্ষেত্রে পেটের নিচে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
- অনিয়মিত মাসিকের কারণে গর্ভধারণের সঠিক সময় নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে যায়। তবে নতুন একটি স্বাভাবিক পিরিয়ড শুরু হওয়ার পরে ওভুলেশন ঘটতে পারে।
- PCOS বা হরমোনাল সমস্যায় অনেক সময় মাসিক ছাড়াই ওভুলেশন হতে পারে এটাকে সাইলেন্ট ওভুলেশন বলে।
ওভুলেশন কখন হয় বুঝার উপায়ঃ
- সার্ভাইকাল মিউকাস বা ডিমের সাদার মতো পিচ্ছিল স্রাব ওভুলেশনের ১-২ দিন আগে বের হবে।
- হালকা পেটে ব্যথা এবং ডিম্বাশয়ের একপাশে টান বা ব্যথা করা।
- স্তন সংবেদনশীলতা বা যৌন বা শারীরিক মিলন করার ইচ্ছা বৃদ্ধি হওয়া।
পরিশেষে জেনে রাখুন অনিয়মিত পিরিয়ড মানেই যে ওভুলেশন ঘটবে না এটা ভুল ধারণা।
উপরোক্ত নির্দেশনা গুলো পর্যবেক্ষণ করে সঠিক সময় বের করা সম্ভব
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের হরমোন বেশি হলে কি বাচ্চা হয় না
ওভুলেশনের কতদিন পর পিরিয়ড হয়
ওভুলেশনের কতদিন পর পিরিয়ড হয় এটা অনেক নারীরা বুঝতে পারেন না। ওভুলেশনের
পর পিরিয়ড সাধারণত ১৪ দিন পর শুরু হয়। আবার কিছু নারীদের ক্ষেত্রে পিরিয়ড
১২ থেকে ১৬ দিন পর শুরু হয়।ওভুলেশন থেকে পিরিয়ড পর্যন্ত সময়কে লুটিয়াল ফেজ
(Luteal Phase) বলে। নিচে নারীদের ওভুলেশনের কতদিন পর পিরিয়ড হয় উল্লেখ করা
হলো।
- যদি মাসিক চক্র ২৮ দিনের হয় তাহলে ওভুলেশন সাধারণত ১৪ দিনের মধ্যে ঘটে এবং পিরিয়ড ২৮তম দিনে শুরু হয়।
- যদি মাসিক চক্র ৩০ দিনের হয় তাহলে ওভুলেশন সাধারণত ১৬ দিনের মধ্যে ঘটে এবং পিরিয়ড ৩০তম দিনে শুরু হয়।
- যদি মাসিক চক্র ২১ দিনের হয় তাহলে ওভুলেশন সাধারণত ৭ম দিনের মধ্যে ঘটে এবং পিরিয়ড ২১তম দিনে শুরু হয়।
- যদি মাসিক চক্র ৩৫ দিনের হয় তাহলে ওভুলেশন সাধারণত ২১তম দিনের মধ্যে ঘটে এবং পিরিয়ড ৩৫তম দিনে শুরু হয়।
ওভুলেশনের পর ডিম্বাশয় থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা জরায়ুর
প্রস্তুত রাখে। নিষেক না হলে প্রোজেস্টেরন লেভেল কমে, জরায়ু আস্তরণ খসে
পড়ে এবং পিরিয়ড বা মাসিক শুরু হয়।
ডিম্বস্ফোটন না হওয়ার কারণ
অনিয়মিত বা অনুপস্থিত পিরিয়ড হলে বুঝতে হবে ডিম্বস্ফোটন ঘটছে না।
ডিম্বস্ফোটন না হওয়ার কারণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। ডিম্বস্ফোটন না
হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হচ্ছে -
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS), অকাল
ডিম্বাশয় ব্যর্থতা (POF), থাইরয়েড রোগ, পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যা,
অতিরিক্ত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ। নিচে ডিম্বস্ফোটন না হওয়ার কারণ গুলো
দেওয়া হলোঃ
- জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে। এছাড়াও পিল বন্ধের পর ওভুলেশন ফিরতে সময় লাগতে পারে।
- প্রিম্যাচিউর ওভারিয়ান ফেইলিউর (POF) এর কারণে ৪০ বছরের আগে ডিম্বাশয়ের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া।
- ডিম্বস্ফোটন প্রক্রিয়া হরমোনের উপর নির্ভরশীল। যদি শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক না থাকে তাহলে ডিম্বস্ফোটন ঘটতে পারে না।
- পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) মহিলাদের মধ্যে ডিম্বস্ফোটন ব্যাহত করে। এর ফলে ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হয় এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ঘটে।
- কিছু মহিলার ক্ষেত্রে, ডিম্বাশয় সময়ের আগে কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে যার কারণে ডিম্বস্ফোটনকে হতে দেয় না।
- থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম ডিম্বস্ফোটন প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে ঘটতে দেয় না।
আরো পড়ুনঃ
পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার কারণ
- পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যা ডিম্বস্ফোটন না হওয়ার অন্যতম কারণ।
- মানসিক চাপ এবং উদ্বেগও শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে যার ফলে ডিম্বস্ফোটন ঘটতে নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়।
- দুধ উৎপাদনকারী হরমোন প্রোল্যাকটিন বেশি থাকলে।
- অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজন হলে ওভুলেশন বাধাগ্রস্ত হয়।
- অতিরিক্ত ব্যায়াম বা স্ট্রেস কর্টিসল হরমোনের প্রভাবে।
- পুষ্টির ঘাটতি যেমনঃ ভিটামিন ডি, আয়রন, জিংকের অভাব।
- এন্ডোমেট্রিওসিস অর্থাৎ জরায়ুর টিস্যু অন্যান্য স্থানে বৃদ্ধি পেলে।
উপরোক্ত কারণ গুলো মহিলাদের ডিম্বস্ফোটন না হওয়ার প্রধান কারণ। এই ধরণের কোনো
সমস্যা থাকলে অবশ্যই একজন ভালো ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা জরুরি।
শেষ কথাঃ ওভুলেশন না হলে করনীয় এবং ওভুলেশন কখন হয়
পরিশেষে বলা যায় যে, ডিম্বস্ফোটন না হলে হতাশ না হয়ে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নিন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন। মানসিক
চাপ কমাতে যোগা ও মেডিটেশন করুন। হরমোনাল থেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসার মাধ্যমে
ডিম্বস্ফোটন ঘটানো সম্ভব। প্রয়োজনে আইভিএফ-এর মতো আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিও
বিবেচনা করা যেতে পারে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url