ছেলেদের বাচ্চা না হওয়ার ১০টি প্রধান কারণ জেনে নিন

ছেলেদের বাচ্চা না হওয়ার কারণ জানতে চান? বিয়ে করার পরেও অনেক ছেলে বাচ্চা লাভ করতে পারেন না। এর পিছনে শারীরিক ও মানসিক নানা রকমের সমস্যা থাকে। তাই আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন ছেলেদের বাচ্চা না হওয়ার কারণ এবং ছেলেদের বাচ্চা না হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত।
ছেলেদের-বাচ্চা-না-হওয়ার-কারণ
এছাড়াও আরো জানতে পারবেন পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার কারণ এবং পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করার উপায়। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক ছেলেদের বাচ্চা না হওয়ার কারণ এবং বাচ্চা না হলে কি করতে হবে এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

সূচিপত্রঃ ছেলেদের বাচ্চা না হওয়ার কারণ

ছেলেদের বাচ্চা না হওয়ার কারণ

ছেলেদের বাচ্চা না হওয়ার কারণ অনেকেই জানেন না। ছেলেদের বাচ্চা না হওয়ার বা পুরুষ বন্ধ্যাত্বের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। ছেলেদের বাচ্চা না হওয়াকে পুরুষ বন্ধ্যাত্ব বা Male Infertility বলে। এটি সাধারণত তখন ঘটে যখন একজন পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদন, কার্যকারিতা বা প্রসবের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকে। যেমনঃ

১. শুক্রাণু উৎপাদন বা কার্যকারিতার সমস্যা
  • এটি ছেলেদের বন্ধ্যাত্বের সবচেয়ে সাধারণ কারণ। অল্প শুক্রাণুর সংখ্যা যার ফলে এক বীর্যপাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক শুক্রাণু থাকে না।
  • খারাপ শুক্রাণুর গতিশীলতা যার কারণে শুক্রাণু সঠিকভাবে সাঁতার কাটতে পারে না বা ডিম্বাণুর দিকে প্রবাহ করতে পারে না।
  • শুক্রাণুর আকৃতি অস্বাভাবিক হওয়ায় ডিম্বাণু নিষিক্ত করতে ব্যর্থ হয়।
  • শুক্রাণু উৎপাদনই না হওয়া অর্থাৎ বীর্যে কোনো শুক্রাণুই না থাকা।
২. শুক্রাণু পরিবহনের সমস্যা
  • শুক্রাণু ঠিকমতো উৎপাদন হলেও সেটি বের হতে না পারা। বীর্যবাহী নালিতে বাধা অর্থাৎ জন্মগত বা সংক্রমণ, আঘাতের কারণে নালি বন্ধ হয়ে যাওয়া।
  • রেট্রোগ্রেড ইজাকুলেশন এর অর্থ হচ্ছে বীর্যপাতের সময় বীর্য মুত্রথলির দিকে চলে আসে মূত্রনালীর দিকে না গিয়ে।
৩. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
  • মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি বা hypothalamus থেকে যে হরমোন শুক্রাণু উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে, তার অভাব।
৪. জীবনযাপন ও পরিবেশগত কারণ
  • ধূমপান বা সিগারেটের নিকোটিন শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান কমায়।
  • মদ্যপান ও মাদকদ্রব্য সেবন করা।
  • শরীরের অতিরিক্ত ওজন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
  • দীর্ঘমেয়াদী চাপ শুক্রাণু উৎপাদনকারী হরমোনকে প্রভাবিত করে।
  • টাইট অন্তর্বাস পরা, গরম পানিতে গোসল করা, ল্যাপটপ কোলে রাখা ইত্যাদি অণ্ডকোষের তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণুর ক্ষতি করতে পারে।
  • পরিবেশ দূষণ ও রাসায়নিকের সংস্পর্শ, যেমনঃ কীটনাশক, ভারী ধাতু, দূষণ ইত্যাদি।
৫. মেডিকেল কারণ ও অসুস্থতা
  • সংক্রমণ রোগ এপিডিডাইমাইটিস (epididymitis) বা অর্কাইটিস (orchitis) এর মতো সংক্রমণ শুক্রাণু উৎপাদন বা পরিবহনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
  • কোয়ানভারিসেলা (কিড়কিনা), এইচআইভি এর মতো রোগ।
  • ক্যান্সারের চিকিৎসা কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি এটি শুক্রাণু উৎপাদন স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে পারে।
  • শৈশবে অণ্ডকোষ স্ক্রোটামে না নামা।
৬. আঘাত বা সার্জারি
  • অণ্ডকোষে আঘাত।
  • ভ্যাসেক্টমি বা বন্ধ্যাকরণ
যদি দীর্ঘ সময় এক বছর বা তার বেশি চেষ্টা করার পরেও সন্তান না হয় তাহলে দম্পতি হিসেবে উভয়েরই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু মহিলারই নয় পুরুষেরও পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

ছেলেদের বাচ্চা না হওয়ার লক্ষণ

ছেলেদের বাচ্চা না হওয়ার লক্ষণ জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেদের বাচ্চা না হওয়ার কোনো স্পষ্ট শারীরিক লক্ষণ নেই যা দেখেই নিশ্চিত হওয়া যায়। অনেক পুরুষই সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন, তবুও সন্তান না হওয়ার সমস্যায় ভুগতে পারেন।

যদি একজন পুরুষ এক বছর ধরে নিয়মিত অরক্ষিত যৌন সম্পর্কের পরেও সন্তানের বাবা হতে না পারেন, তবে এটি একটি প্রধান লক্ষণ। ইরেকশন বা যৌন সম্পর্কের সময় ইরেকশন বজায় রাখতে সমস্যা হলে এটি বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ হতে পারে।

শুক্রাণুর সংখ্যা বা গুণগত মানের সমস্যা থাকলে, এটি সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। শরীরের হরমোনের স্তরে পরিবর্তন, যেমন টেস্টোস্টেরনের স্তরের হ্রাস, যা যৌন আগ্রহ কমাতে পারে। শরীরের কিছু পরিবর্তন যেমন স্তন বৃদ্ধি, চুল পড়া বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা।

মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়তে পারে, যা উর্বরতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে, এছাড়াও কিছু ইঙ্গিত বা সূচক থাকতে পারে যা সমস্যার দিকে নির্দেশ করে। এগুলো প্রধানত দুই ধরনের: শারীরিক এবং হরমোন সংক্রান্ত।

১. শারীরিক সমস্যার লক্ষণ
  • যেমন, উত্থান সমস্যা (Erectile Dysfunction), অকাল বীর্যপাত (Premature Ejaculation), বা একদম বীর্যপাত না হওয়া।
  • অণ্ডকোষে ব্যথা, ফুলা বা চাকা অনুভব করা। এটি Varicocele (অণ্ডকোষের শিরা ফুলে যাওয়া) বা ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।
  • অণ্ডকোষের আকার ছোট বা শক্ত হয়ে যাওয়া। এটি শুক্রাণু উৎপাদনে বিঘ্নের লক্ষণ।
  • জননতন্ত্রে বারবার ইনফেকশন হওয়া।
২. হরমোনের ভারসাম্য
  • রুষত্বহীনতা বা দাড়ি-গোঁফ কম গজানো, গলার আওয়াজ পরিষ্কার না হওয়া।
  • যৌন ইচ্ছা মারাত্মক ভাবে কমে যাওয়া এবং শরীরের লোম কমে যাওয়া।
৩. অন্যান্য জম্মগত লক্ষণ
  • শৈশবে অণ্ডকোষ না নামার (Undescended testicles) ইতিহাস
  • অতীতে ক্যান্সারের কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি নেওয়া।
  • কোমর বা pelvic region এ আঘাত পাওয়া।
  • গালফুলা রোগ (Mumps) হওয়ার ইতিহাস যা অণ্ডকোষকে প্রভাবিত করেছে।
পুরুষ বন্ধ্যাত্বের নিজস্ব কোনো স্পষ্ট লক্ষণ নেই। দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেও সন্তান না হলে এবং উপরের যে কোনো শারীরিক বা হরমোনগত সমস্যা থাকলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার কারণ

পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার কারণ গুলো জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে পরিবেশগত দূষণ এবং আধুনিক জীবনযাত্রার ধরন শুক্রাণু কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ। কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন থেকে নির্গত ক্ষতিকর রশ্মি এবং দূষিত বাতাস শুক্রাণুর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। শারীরিক অসুস্থতা, অতিরিক্ত ওজন, এবং মানসিক চাপ শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমান হ্রাস করতে পারে।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, ধূমপান এবং মাদকদ্রব্যের ব্যবহার শুক্রাণুর উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। যদিও পুরুষদের প্রজনন বয়স দ্বারা প্রভাবিত হয় না, তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে শুক্রাণুর গুণমান এবং পরিমাণ হ্রাস পেতে পারে। কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়াও টাইট অন্তর্বাস (জিন্স, ইন্ডারওয়্যার) পরা, দীর্ঘক্ষণ ল্যাপটপ কোলে রাখা, গরম পানিতে গোসল করা বা সাঁতার কাটা – এসব কারণে অণ্ডকোষের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, যা শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য ক্ষতিকর। ভেরিকোসিল এটি অণ্ডকোষের শিরা ফুলে যাওয়া একটি সাধারণ অবস্থা, যা শুক্রাণুর সংখ্যা কমার একটি বড় কারণ।

কিছু সংক্রমণ শুক্রাণু উৎপাদন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যেমন: গনোরিয়া, ক্লামাইডিয়া, প্রোস্টাটাইটিস, অর্কাইটিস (অণ্ডকোষের ইনফেকশন)। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জীবনযাপনের ধরণ পরিবর্তন করে এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান বাড়ানো সম্ভব।

বাচ্চা না হলে কি করতে হবে

বাচ্চা না হলে কি করতে হবে এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চা না হলে কি করতে হবে এটা অনেকেই আমরা বুঝতে পারি না। বাচ্চা না হলে এটি একটি খুবই সাধারণ সমস্যা এবং এর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথম অবস্থায় আপনি এবং আপনার সঙ্গী উভয়েকেই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে এবং কিছু পরীক্ষা করতে হবে। নিচে বাচ্চা না হলে কি করতে হবে উল্লেখ করা হলো।

১. চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন
  • একজন বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন, যিনি বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ। তারা আপনার এবং আপনার সঙ্গীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নির্ধারণ করবেন।
২. বীর্য বিশ্লেষণ
  • পুরুষদের জন্য বীর্য বিশ্লেষণ করা হয়, যা শুক্রাণুর সংখ্যা, গতিশীলতা এবং গুণমান পরীক্ষা করে।
৩. মহিলাদের পরীক্ষা
  • মহিলাদের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়, যেমন হরমোনের স্তর পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা।
৪. লাইফস্টাইল পরিবর্তন
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলুন। মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করতে পারেন।
৫. চিকিৎসা পদ্ধতি
  • যদি প্রয়োজন হয়, চিকিৎসক বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন আইভিএফ (IVF) বা আইইউআই (IUI) এর পরামর্শ দিতে পারেন।
৬. সমর্থন নিন
  • বন্ধ্যাত্বের কারণে মানসিক চাপ হতে পারে, তাই আপনার সঙ্গী বা বন্ধুবান্ধবের সাথে কথা বলুন। প্রয়োজনে কাউন্সেলিংও নিতে পারেন।
৭. অন্য বিকল্প বিবেচনা করুন
  • যদি প্রাকৃতিকভাবে সন্তান ধারণ করা সম্ভব না হয়, তবে দত্তক নেওয়া বা অন্য বিকল্পগুলি বিবেচনা করতে পারেন।

পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করার উপায়

পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করার উপায় জানতে চান? পুরুষের বন্ধ্যাত্ব একটি সাধারণ সমস্যা, এবং এটি মোকাবেলার জন্য বেশ কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে। যেমনঃ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ, বীর্য বিশ্লেষণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, লাইফস্টাইল পরিবর্তন, মানসিক চাপ কমানো, চিকিৎসা পদ্ধতি, হরমোন পরীক্ষা, জেনেটিক পরীক্ষা সহ বেশ কিছু উপায় রয়েছে। নিচে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করার উপায় গুলো দেওয়া হলো।
  1. একজন বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন, যিনি বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ। তারা আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নির্ধারণ করবেন।
  2. পুরুষদের জন্য বীর্য বিশ্লেষণ করা হয়, যা শুক্রাণুর সংখ্যা, গতিশীলতা এবং গুণমান পরীক্ষা করে।
  3. ভিটামিন এবং জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শুক্রাণুর গুণগত মান বৃদ্ধি পেতে পারে। কিছু খাবার যেমন: বাদাম, মাছ, ফলমূল ও সবজি।
  4. ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং অতিরিক্ত ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
  5. যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা অন্যান্য শিথিলকরণ কৌশল ব্যবহার করে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
  6. যদি প্রয়োজন হয়, চিকিৎসক বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন আইভিএফ (IVF) বা আইইউআই (IUI) এর পরামর্শ দিতে পারেন।
  7. টেস্টোস্টেরন এবং অন্যান্য প্রজনন হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করা হতে পারে। হরমোনের সমস্যা থাকলে তা শুক্রাণু উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে।
  8. যদি অন্য সব পরীক্ষা স্বাভাবিক আসে, কিন্তু তবুও সমস্যা থাকে, তাহলে জেনেটিক কারণগুলো খতিয়ে দেখার জন্য পরীক্ষা করা হতে পারে।
  9. বন্ধ্যাত্বের কারণে মানসিক চাপ হতে পারে, তাই আপনার সঙ্গী বা বন্ধুবান্ধবের সাথে কথা বলুন। প্রয়োজনে কাউন্সেলিংও নিতে পারেন।
এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার বন্ধ্যাত্বের সমস্যা মোকাবেলা করতে পারবেন।

পুরুষের বন্ধ্যাত্ব পরীক্ষা

পুরুষের বন্ধ্যাত্ব পরীক্ষা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। পুরুষের বন্ধ্যাত্ব পরীক্ষা করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করা হয়। পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব নির্ণয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পরীক্ষাগুলি হলো বীর্য বিশ্লেষণ (Semen Analysis) এবং শুক্রাণু অনুপ্রবেশ রচনা পরীক্ষা (Sperm Penetration Assay)।

১. বীর্য বিশ্লেষণ (Semen Analysis)
  • এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় বীর্যের পরিমাণ, শুক্রাণুর সংখ্যা, গতিশীলতা (motility) এবং আকার (morphology) পরীক্ষা করা হয়।:
২. শুক্রাণুর সংখ্যা
  • প্রতি মিলিলিটারে কত মিলিয়ন শুক্রাণু আছে তা মাপা হয়। স্বাভাবিকভাবে প্রতি মিলিলিটারে ১৫ মিলিয়নের বেশি শুক্রাণু থাকা উচিত।
৩. শুক্রাণুর গতিশীলতা
  • কত শতাংশ শুক্রাণু সঠিকভাবে নড়াচড়া করতে পারে তা দেখা হয়। সাধারণত ৬০% এর বেশি শুক্রাণু গতিশীল হওয়া উচিত।
৪. শুক্রাণুর আকার (Morphology)
  • স্বাভাবিক আকৃতির শুক্রাণুর শতাংশ নির্ণয় করা হয়। স্বাভাবিকভাবে ৪% বা তার বেশি শুক্রাণু স্বাভাবিক আকৃতির হওয়া উচিত।
৫. হরমোন পরীক্ষা (Hormone Tests)
  • রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে টেস্টোস্টেরন, ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH), লুটিনাইজিং হরমোন (LH) এবং প্রোল্যাকটিনের মতো হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এই হরমোনগুলো শুক্রাণু উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. স্ক্রোটাল আল্ট্রাসাউন্ড (Scrotal Ultrasound)
  • এই ইমেজিং পরীক্ষার মাধ্যমে অণ্ডকোষ, এপিডিডাইমিস (শুক্রাণু যেখানে পরিপক্ক হয়) এবং ভাস ডিফারেন্স (শুক্রাণু বহনকারী নালী) পরীক্ষা করা হয়। এটি কোনো অস্বাভাবিকতা, যেমন ভ্যারিকোসিল (অণ্ডকোষের শিরা ফোলা) বা টিউমার সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
৭. পোস্ট-ইজাকুলেটরি ইউরিন অ্যানালাইসিস (Post-ejaculatory Urine Analysis)
  • বীর্যপাতের পর প্রস্রাবে শুক্রাণু আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। এটি রেট্রোগ্রেড ইজাকুলেশন (বীর্যপাতের সময় বীর্য লিঙ্গ থেকে বের না হয়ে মূত্রাশয়ে চলে যাওয়া) নির্ণয়ে সহায়ক।
৮. জেনেটিক টেস্টিং (Genetic Testing)
  • যদি শুক্রাণুর সংখ্যা অত্যন্ত কম হয় বা কোনো স্পষ্ট কারণ খুঁজে না পাওয়া যায়, তবে জেনেটিক কারণগুলো খতিয়ে দেখার জন্য এই পরীক্ষা করা হতে পারে।
৯. অন্যান্য পরীক্ষা
  • প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা যেমন টেস্টিকুলার বায়োপসি (অণ্ডকোষ থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে পরীক্ষা) বা অ্যান্টিস্পার্ম অ্যান্টিবডি টেস্টও করা হতে পারে।
এই পরীক্ষাগুলো পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ সনাক্ত করতে এবং সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

পুরুষের শুক্রানু কাউন্ট কত

পুরুষের শুক্রানু কাউন্ট কত জানতে চান? পুরুষের শুক্রানু কাউন্ট কত অনেকেই জানে না। পুরুষের শুক্রাণু কাউন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক যা প্রজনন স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত। সাধারণভাবে, প্রতি মিলিলিটার বীর্যরসে (সিমেন) ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি শুক্রাণু থাকা স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। নিচে পুরুষের শুক্রানু কাউন্ট কত উল্লেখ করা হলোঃ
  1. স্বাভাবিক শুক্রাণু কাউন্ট: প্রতি মিলিলিটার বীর্যে ১৫ মিলিয়ন শুক্রাণু বা তার বেশি।
  2. শুক্রাণুর মোট পরিমাণ: সাধারণত প্রতি বীর্যপাতের সময় ১.৫ থেকে ৫ মিলিলিটার বীর্য উৎপন্ন হয়।
  3. শুক্রাণুর গুণমান: শুক্রাণুর গুণমানের জন্য, মোট শুক্রাণুর ৬০% এর বেশি যদি গতিশীল হয়, তবে তা স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়।
যদি শুক্রাণুর সংখ্যা ১৫ মিলিয়নের কম হয়, তাহলে এটি অলিগোস্পার্মিয়া নামে পরিচিত এবং এটি বন্ধ্যাত্বের একটি কারণ হতে পারে।

শেষ কথাঃ ছেলেদের বাচ্চা না হওয়ার কারণ

ছেলেদের বাচ্চা না হওয়ার কারণ প্রধানত শুক্রাণু উৎপাদন, গুণগত মান বা কার্যকারিতার সমস্যা দায়ী। এর মধ্যে অপর্যাপ্ত শুক্রাণু সংখ্যা, দুর্বল শুক্রাণুর গতিশীলতা, অস্বাভাবিক শুক্রাণুর গঠন, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, অণ্ডকোষের সমস্যা, এবং জীবনযাত্রার ভুল অভ্যাস (যেমন ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত ওজন) উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কিছু শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ এবং পরিবেশগত কারণও বন্ধ্যাত্বে ভূমিকা রাখে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে সহায়ক হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url